জমির খতিয়ান – মোহাম্মদ মোশারেফ হোসেন জগলু

April 12, 2025

By Mohd Rumi Alam

জমির খতিয়ান কি:
জমির খতিয়ান বলতে মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ। যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে এক বা একাধিক ভূমি।মালিকদের সম্পত্তির বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাহাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ানে ভূমি অধিকারীর নাম ও প্রজার নাম,জমির দাগ নাম্বার, পরিমাণ, জমির প্রকৃতি ও খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। খতিয়ানে নকশা ও ম্যাপ অনুসারে মালিকানা সম্পৃক্ত তথ্য, যেমন ভূমিটি কোন মৌজায় অবস্থিত, খতিয়ান নাম্বার, ভূমির দাগ নাম্বার, পরিমাণ মালিক ও দখলদারের বিবরণ থাকে।

বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান:
১.সি.এস.খতিয়ান
২.আর.এস.খতিয়ান
৩.এস.এ./পি.এস.খতিয়ান
৪.বি.এস.খতিয়ান।

সি.এস.খতিয়ান ( Cadastral survey) :জমি পরিমাপ পদ্ধতি -১৯১৯-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ (ভূমি অফিসের কর্মকর্তা) প্রতিটি ভূ-খণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন,অবস্থান ও ব্যবহার প্রভৃতি নিদের্শক, মৌজা নকশা, মালিক দখলদারদের বিবরণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি(প্রস্তুত) করেন তাহা সি.এস.খতিয়ান নামে পরিচিত।
সি.এস.খতিয়ান হলো তৎকালীন ভারত” উপমহাদেশের প্রথম ভূমি জরিপ।১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজা স্বত্ব আইনের ১০ নং ধারা বলে ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পযর্ন্ত পরিচালিত জরিপ।

আর.এস.খতিয়ান ( Revisional Survey):
সি.এস.খতিয়ান জরিপের পর অনেক ভুল ক্রটি ধরা পড়ে। পরে সেই ভুল ক্রটি সংশোধন করে পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তাহাকে আর.এস.খতিয়ান বলে।

পি.এস.জরিপ (Pakistan Survey) :
পি.এস.জরিপকে আবার এস.এ.জরিপ ( State Acquisition) বলে। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পযর্ন্ত পি.এস.জরিপ পরিচালিত হয়। এস.এ.জরিপ হলো ১৯৫০ সালে জমিদারি সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি ভূ-সস্পত্তি অধিগ্রহণ করেন। অত:পর সরকারের জরিপ কমর্চারিগণ সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সি.এস.খতিয়ান সংশোধন করে যে নতুন খতিয়ান প্রস্তুত করেন তাহাই এস.এ. খতিয়ান নামে অভিহিত হয়। মূলত পি.এস. ও এস.এ.খতিয়ান অভিন্ন। এস.এ.খতিয়ান বাংলা ১৩৬২ ( ১৯৫৬ ইং) সালে করা হয়।

বি.এস.খতিয়ান (Bangladesh Survey):
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত যে জরিপ করেন তাহাকে বি.এস.জরিপ বলা হয়।

১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ববঙ্গে জমিদারী অধিগ্রহণ করেন। ২/৪/১৯৫৬ ইং তারিখের ৩ নং ধারা বলে সরকার কর্তৃক জমিদারি দখল নেওয়ার পর উক্ত এ্যাক্টের ১৭ ধারা মোতাবেক যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাহা এস. এ.খতিয়ান নামে অভিহিত হয়। (বলা বাহুল্য সি.এস.খতিয়ান প্রস্তুত করার সময় জমিদারগণের নাম খতিয়ানের উপরিভাগে এবং দখলদার রায়তের নাম খতিয়ানের নিচে লেখা হতো। সেই সময় জমিদারগণ সরকার পক্ষে জমির মালিক ছিলেন। রায়তগণ প্রজা হিসেবে শুধুমাত্র ভোগ দখলদার ছিলেন।

শিরোনামের ছবি সাপ্তাহিক আলোকিত সন্দ্বীপ থেকে সংগৃহীত।

 

লেখকের গ্রামের বাড়ি বাটাজোড়া। বাটাজোড়া ওয়াসিল মালাদারের বংশকথা নিয়ে অনন্য সংকলন ‘শিকড়’ এর সম্পাদক। চট্টগ্রাম থাকেন।

 

Related Posts

শিকড়ের সন্ধানে – অনিন্দিতা দাস

তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি৷ বাবা মা জেঠু বড়মা পিসিরা আর আমরা ভাই বোনেরা মিলে গোয়া পৌঁছালাম৷ গোয়া পৃথিবী বিখ্যাত সমুদ্র তীর। সারাবছর দেশী বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা সেখানে৷ কোভালাম বীচে গিয়ে জেঠু বলে উঠলেন, " ধূর এটা সাগরপার? আমাদের সন্দ্বীপের কাছে এই গোয়া নস্যি"। সন্দ্বীপ...

read more
’শিকড়’ বইয়ের সম্পাদকের বক্তব্য

’শিকড়’ বইয়ের সম্পাদকের বক্তব্য

জনাব ডাঃ রুমী আলম, আচ্ছালামুয়ালাইকুম। আমাদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে রচিত শিকড় বইটির আপনার প্রেরিত রিভিউটি পেয়ে অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত হয়েছি। গভীর মনোনিবেশ সহকারে বইটি পড়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার...

read more