জনাব ডাঃ রুমী আলম,
আচ্ছালামুয়ালাইকুম। আমাদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে রচিত শিকড় বইটির আপনার প্রেরিত রিভিউটি পেয়ে অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত হয়েছি। গভীর মনোনিবেশ সহকারে বইটি পড়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কর্মব্যস্ত জীবনে লেখালেখির প্রতি আপনার আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। এককথায় আমি অভিভূত।
যাহোক,শিকড়ের সম্পাদক হিসেবে আপনার মূল্যবান উপদেশ ও সুনির্দিষ্ট কিছু অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনার বিবেচনা ও অবগতির জন্য আমার কিছু অভিমত ও ব্যাখ্যা তুলে ধরছি।
১.১৯২৮ সালে নজির আহাম্মদ মিয়া আবুল হোসেন মিয়ার কন্যা চেমন আফরোজকে বিয়ে করেন। যাহা সঠিক ও নির্ভুল। চেমন আফরোজ ছিলেন আবুল হোসেন মিয়ার প্রথম স্ত্রীর কনিষ্ঠ কন্যা। আবার কাকতালীয়ভাবে আবুল হোসেন মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ও ছিল চেমন আফরোজ। (যাহা স্মৃতির কল্লোল-সেলিনা হোসেন, পৃ-৫৯ এ আবুল হোসেন মিয়ার বংশধারা তে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লখ আছে।)
২.বাদশা আলম মিয়া কোন ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন? ২৬৩ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে তিনি তৎকালীন (১৯৫০-১৯৫৫) কালাপানিয়া,বাটাজোড়া, বলাপাড়,কাজিরখিল,চররহিম,শফি নগর সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর কালাপানিয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অপরদিকে ২৮৪ পৃষ্ঠায় আছে, ১৯৬০ সালে বাটাজোড়া উনিয়নের (বাটাজোড়া, বাওয়া, শফিনগর, সাতঘড়িয়া, কাজিরখিল) প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন বাদশা আলম মিয়ার ভাগ্নে মাকছুূদুর রহমান।
৩.সাহেবানী মসজিদের নির্মাণকাল ১৬৩৪ সাল (পৃষ্ঠা-৩৮৫) লিখা হয়েছে।এই তথ্যটি সন্দ্বীপের ইতিহাস-সমাজ ও সংস্কৃতি-ডঃ রাজিব হুমায়ুন লিখিত বই থেকে নেওয়া হয়েছে। যাহা আমি উক্ত লেখার নিচে তথ্যসূত্রে উল্লেখ করেছি।এদিকে আপনার ভাষ্যমতে ডঃহাসান মাহমুদ সম্পাদিত সন্দ্বীপ পিডিয়াতে ১৭৫০ সাল লিখা হয়েছ।আবার ডঃ সৈয়দ মাহমুদ হোসেন Muslim monument in Bangladesh গ্রন্থে লিখেছেন, It was built in Ssndwip in the 17th century.(শিকড়,পৃষ্ঠা-৩৮৫)।সুতরাং বিতর্ক থেকে যাচ্ছে। তবুও আপনারা যারা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন তাদেরই মতামত গ্রহণযোগ্য।
৪.পৃষ্ঠা -১৭৮ এ লিখা ১৭৭৮ সালে মি. রানেল সন্দ্বীপের প্রথম ম্যাপ অংকন করেন
।এই তথ্যটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত সন্দ্বীপ সমীক্ষা – হাসান মাহমুদ সম্পাদিত বই থেকে নেওয়া হয়েছে। যাহা তথ্যসূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫.ব্রিটিশ আমলে সন্দ্বীপ কতসালে নোয়াখালীর সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়? ১৭৫ পৃষ্ঠায় লিখা ১৮৭৭ সাল সঠিক। আর ২৭৯ পৃষ্ঠায় ৬ষ্ঠ লাইনে একই বর্ষের জায়গায় ১৮৭৭ সাল হবে।এই ভুল টি আপনার গোচরীভূত হওয়ায় আমি কিছুটা বিস্মৃত হয়েছি। আপনার গভীর পর্যবেক্ষণ ও সুক্ষ্ম দৃষ্টি ভঙ্গি সত্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
৬. চিঠিতে আমার জেঠা, আমার চাচা লিখার ব্যাপারে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। তবে শিরোনাম হলো বিলুপ্ত যোগাযোগ মাধ্যম চিঠি-মোশারেফ হোসেন জগলু। তাই আমার জেঠার সাথে নাম ও দিয়েছি।
যেমন, আমার জেঠা মরহুম বাদশা আলম মিয়ার হাতের লিখা চিঠি।
৭.বইয়ে এ বংশের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনীর তথ্যসূত্র উল্লেখ করলে ভালো হতো।যাহা অত্যন্ত প্রয়েজন ছিল।আপনার মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
৮.সূর্যাস্ত আইন ও জমিদারি প্রথা বিলোপ এর তথ্যসূত্র একসাথে বাংলাপিডিয়া থেকে সংগ্রহীত লেখা হয়েছে।যেমন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ত্ব আইন একসাথে দেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে।) আশাকরি আগামী সংস্করণে আপনার সুচিন্তিত ও মূল্যবান উপদেশ ও পরামর্শ সংযোজন করা হবে।
৯.ঋণ সালিশি বোর্ড বিষয়ে অনেক গবেষণার প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে আমার জেঠা মরহুম এ,জে,এম,সিরাজুল ইসলাম ঋণ সালিসি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।অত্র বইয়ের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উনার স্বাক্ষরযুক্ত চেয়ারম্যান, ঋণ সালিসি বোর্ডের প্রামাণ্য
দলিল আছে।তবে যতদূর জানা যায় ঋণ সালিসি বোর্ড কৃষকদের অনুকুলে শেরেবাংলা ফজলুল হক কতৃক গঠিত হয়েছিল। উক্ত বিচার কার্যের কিছু কাগজপত্র আমার সংরক্ষণে আছে।
অবশেষে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে আমার অভিমত সমাপ্ত করার আগে বলতে চাই আল্লাহর রহমতে আগামী সংস্করণে আপনার মূল্যবান উপদেশ সমূহ সুন্দর, সাবলীল ও তথ্য সমৃদ্ধভাবে অনুসরণ করে বইটি পুনঃপ্রকাশের জন্য আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আমার উপরক্ত মতামত ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রহিল। আপনার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর, সমুজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও নিরন্তর ভালোবাসা। আল্লাহ আপনাকে নিরাপদে রাখুন।
-মোশারেফ হোসেন জগলু।
এই বইয়ের অন্যতম লেখক জনাব মেহেদী জাকিরুলের বক্তব্যঃ চতুর্দিকের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে একটা জ্ঞানগর্ভ মুক্ত সমালোচনা পড়লাম। আসলে এমন একটা যৌক্তিক মানদন্ডের মুখোমুখী না হলে কখনও ভুলত্রুটি সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়না। অনেক ভুল; যেমন রিভিউতে চিহ্নিত করা কিছু কিছু তথ্যের সংযোজন যৌক্তিক কারণে যদিও সম্ভব ছিলোনা; আবার অনেক ভুল, যেমন ঐতিহ্যের ধারকবাহী অনেক তৈজস ও বিবিধ পন্য সামগ্রীর ছবি পরিবারের সদস্যদের নিকট (ভাগ হয়ে যাওয়া) হতে সংগ্রহ প্রচেষ্টায় একটু পরিশ্রম করলে সংযোজন সম্ভব ছিল। . জনাব রুমি আলম কে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আমাদের এই সমস্ত দিকের সীমাবদ্ধতাকে সুন্দর করে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। সম্পূর্ণভাবে হৃদয়ের আবেগ অনুভুতির উপর ভর করে আমরা পরিবারের চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্ম “শিকড়” রচণার মতো একটি দুঃসাহসিক কর্মসুচী বাস্তবায়নে এগিয়ে গিয়েছি। অথচ, এই প্রজন্ম কে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের ছিটেফোঁটা নমুণার স্বাক্ষী ও বলা যাবে না। প্রজাস্বত্ব আইন প্রনয়ন ও মেঘনার কড়াল গ্রাসে যখন একের পর এক ভুসম্পত্তির বিনাস ঘটছিলো তখন আমাদের পিতামহগন ও তৎ-পরবর্তী বাপ দাদা চাচা জেঠাগন অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় দিশেহারা। একদিকে জমিদারি চলে যাচ্ছে আইনের ঘেরাটোপে অপর দিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়! ঘটা করে কোনো তথ্যের সংরক্ষণ এর প্রতি কারো নজর ছিলো বলে মনে হয় না, কিংবা আগ্রহ ও না। . বাটাজোড়ায় আমাদের সর্বশেষ সম্পত্তি যখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তখন আজকের এই “শিকড়” সম্পাদক মহোদয় আমার বড়ো ভাই মোশাররফ হোসেন জগলু, দিদারুল আলম প্রমুখের বয়স বড়োজোর ১৩/১৪ হবে। অথচ এই সম্পাদক মহোদয় ও উনার সমসাময়িক বয়সীগন এখন আমাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠতম সদস্য। তাহলে এটা সহজেই অনুমেয় দালিলিক ভাবে তথ্যের ঘাটতি পূরণ উনাদের পক্ষে ততটা সম্ভব নয়। চারিদিকে ঘেঁটেঘুঁটে যা পেয়েছেন তা ই সংযোজন করেছেন। একটা কথা আমাদের কারো লিখায় ভুল বশত উঠে আসেনি যে আমরা যখন আমাদের ওরিজিনাল বাড়ি ভাঙ্গার পর ঠাকুর বাজার সংলগ্ন বাড়িটি ক্রয় করি তখন রেজিষ্ট্রেশন কালে পুরোনো সম্ভবত সি এস খতিয়ানে জমিদার হাজী ওয়াসিল মাহালাদারের নাম পাওয়া যায়। অথচ উক্ত বাড়িটি ছিলো আমাদের মুল বাড়ির প্রায় দেড় মাইল পূর্বে। অতএব এখানে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ভূসম্পত্তির পরিধির একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট। ইত্যকার বহু ইনডাইরেক্ট তথ্যাদি সংগ্রহে আমরা সচেষ্ট ছিলাম না। স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে অভিজ্ঞতার অপ্রতুলতা হেতু খুঁটিনাটি দিক গুলোর প্রতি আমাদের ততটা দৃষ্টিপাত ছিলোনা। কচি, জগলু ও দিদার দাদাদের মতো আমরা বাকীরা সবাই মিলে একটু আন্তরিক হলে হয়তো জ্বনাব রুমি আলম কর্তৃক চিহ্নিত অনেক তথ্যের সমর্থনে প্রয়োজনীয় পেপারস আমরা জড়ো করতে পারতাম। তাছাড়া আলীগড় এর অবস্থান গত জায়গার ভুল নামটি সহ আরো অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুলের সংশোধন সম্ভব ছিল। . যাক, পরিশেষে বলবো, একথা অস্বীকার করার জো নেই যে, আমরা যারা “শিকড়” রচনার সাথে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলাম প্রত্যেকেরই এমন একটি মহতি গ্রন্থ প্রযোজনার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। অতএব সকল রিভিউ তে উঠে আসা দুর্বলতা গুলো আমাদের আগামী সংস্করণ সমুহে সংযোজন ও সংশোধন হরা হবে ইনশাআল্লাহ !